ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাবে শীতকালীন সবজি চাষিরা চরম হুমকিতে ।।শীতকালীন সবজির দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা।
ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাবে যশোরে মুষলধারে বৃষ্টিপাত হয়েছে। মাত্র ১২ ঘন্টার ব্যবধানে জেলায় সর্বোচ্চ ৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া বিরামহীন এ বৃষ্টির কারণে জেলার বিস্তীর্ণ মাঠের শীতকালীন সবজি ও রবিশস্য হুমকির মুখে পড়েছে। তবে উপকার হয়েছে বোরো ধানের জন্য তৈরি করা বীজতলার। কৃষি বিভাগ বলছে বৃষ্টিপাত বিলম্বিত হলে শীতকালীন সবজি ও রবি শস্যর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ চরম পর্যায়ে চলে যেতে পারে।
যশোর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মতিউর রহমান বিমান ঘাঁটি নিয়ন্ত্রিত আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ভোরে সূর্যোদয়ের পর প্রথমে কুয়াশায় ঢেকে যায় প্রকৃতি। এরপর আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যায়। সেই সঙ্গে থেমে থেমে ঝিরঝির বৃষ্টি হতে থাকে। যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে মুষলধারে বৃষ্টি চলতে থাকে। দিনভর টানা বৃষ্টিপাতের কারণে দুর্ভোগে পড়েন শহরের সাধারণ মানুষ। চলমান অবরোধের মধ্যে রুটিরুজির তাগিদে রাস্তায় বের হলেও যানবাহন কম থাকায় গন্তব্যে পৌঁছাতে দীর্ঘ সময় সড়কে অপেক্ষা করতে হয় অনেককেই।এ ছাড়া লাগাতার বৃষ্টিপাতে যশোর শহরের অনেক নিচু রাস্তা জলমগ্ন হয়ে যায়। এতে পথচারীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। বিঘ্ন ঘটে হালকা যানবাহন চলাচলে। বৃষ্টির কারণে দুপুরের পর প্রধান সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল কমে যায়।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত যশোরে সর্বোচ্চ ৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আজ শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে বলে আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাবে যখন টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে ঠিক তখনি যশোরের বিস্তীর্ণ মাঠে রয়েছে শীতের হরেক রকমের সবজি ও রবিশস্য। টানা বৃষ্টির কারণে এসব সবজি ও রবিশস্য নিশ্চিত ক্ষতির মুখে পড়বে বলে কৃষক ও কৃষি বিভাগ আশঙ্কা করছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার সবজি জোন এলাকায় অধিকাংশ ক্ষেতে পানি জমে গেছে। পানি জমে যাওয়ার কারণে এসব ক্ষেতের সবজি ও রবিশস্য ক্ষতির মুখে পড়েছে বলে কৃষকরা জানান।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এই মুহূর্তে যশোর জেলায় প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির আবাদ রয়েছে। এর পাশাপাশি ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা, ১৬শ হেক্টর জমিতে মসুরি ও ১৫শ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ রয়েছে। বৃষ্টির কারণে এসব ক্ষেতের সবজি ও রবিশস্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেতে পানি জমে যাওয়ায় কৃষক নিশ্চিত ক্ষতির মুখে পড়বে বলে দাবি করছেন।
বেনাপোলের এক সবজি চাষি বলেন, তাদের মাঠে এখন বাঁধাকপি ও ফুলকপি রয়েছে। এসব ক্ষেতে দিনভর বৃষ্টির কারণে পানি জমে গেছে। সহসা বৃষ্টি যদি থেমে না যায় তাহলে নিশ্চিত এসব সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাবে। তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে দুই দফা বৃষ্টির কবলে পড়ে সবজি আবাদে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন উৎপাদনের মোক্ষম সময়ে ফের বৃষ্টির কারণে তারা চরম ক্ষতির মুখে পড়বে বলে জানান।
একই কথা বলেন, আব্দুল আজিজ নামের আরেক সবজি চাষি। তিনি বলেন, আমাদের মাঠে ভারতীয় নাসিক-৫৩ জাতের পেঁয়াজ আবাদ করা হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে পেঁয়াজ তোলার সময় হয়ে গেছে। কিন্তু বৃষ্টি হওয়ায় এসব পেঁয়াজ ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, বাজারে এই সবজির দাম কিছুটা নিম্নমুখী। বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেলে শীতের সবজির দাম আরও বাড়লে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, মিগজাউমের প্রভাবে যে বৃষ্টি চলমান আছে তাতে আমরাও কৃষকের মতো চিন্তিত। তবে বৃষ্টি যদি বিলম্বিত না হয় তাহলে ক্ষেতের পানি সরে গেলে এটি সবজি ও রবিশস্যর জন্য ভালো হবে। আর বিলম্বিত হলে নিশ্চিত ক্ষতি হবে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, হেমন্তের এ টানা বৃষ্টিতে সবজি ও রবিশস্য নিয়ে আমরা শঙ্কায় থাকলেও বোরোর বীজতলার জন্য বড় উপকার হয়েছে।
Post a Comment