নাভারন হাইওয়ে পুলিশের অবৈধ যান চলাচলের গোপন ঘুষ চুক্তির স্লিপ ফাঁস
বেনাপোল প্রতিনিধি:
যশোর জেলার নাভারন হাইওয়ে পুলিশ অবৈধ যান চলাচরের জন্য চুক্তির মাধ্যেমে মাসিক স্লিপ দিয়েছেন। তবে কোন কোন সময় ওই স্লিপ অবৈধ ছোট ছোট পরিবহনের কাছে থাকলেও তা না মেনে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ায় চালকরা ক্ষেপেছেন পুলিশের উপর। তাদের অভিযোগ মাসিক স্লিপ থাকলেও পুলিশ মাঝে মাঝে তাদের গাড়ি আটক করে আবারও চাঁদাবাজি করছে।
অভিযোগ রয়েছে, ভিন্ন ভিন্ন সমবায় সমিতিসহ সাদা কাগজে স্লিপ তৈরি করে অবৈধ সকল যান হাইওয়েতে চলাচলের বিপরীতে নাভারন হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ আব্দুল্লাহ আল মামুন কয়েকটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মাসিক চুক্তিতে ইজিবাইক প্রতি ৯ শত টাকা, জেএসএ ১ হাজার টাকা, নসিমন করিমন প্রতি ৭শত টাকা, মাটি বহনের ট্রাক ও ট্রাক্টর প্রতি ১ হাজার টাকা করে গ্রহণ করেন। সে হিসেব মতে নাভারন হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ আব্দুল্লাহ আল মামুন কমপে মাসিক ২০ লাধিক টাকা চাঁদবাজি করেন।
গত মঙ্গলবার চুক্তির স্লিপ থাকলেও ১০টি ইজিবাইক আটক করায় স্থানীয় ইজিবাইক চালকরা ফুঁসে উঠে সংবাদকর্মীদের কাছে অভিযোগ করেন।
অবৈধ ওই চালকরা বলেছেন, হাইওয়ে পুলিশের সাথে চুক্তিভিত্তিক মাসিক চঁদা পরিশোধ করা হয়। চুক্তির স্লিপ থাকার পরেও কলাগাছি এলাকা থেকে তাদের ইজিবাইকগুলো আটক করা হয়েছে। পুলিশ মাসিক চুক্তিতে চাঁদা নেওয়ার পরেও যদি চোখ পাল্টি দিয়ে তাদের ইজিবাইকের উপর ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত মামলা দেয় তাহলে তাদের উপায় কি হবে? প্রশ্ন রেখে তারা বলেন, এটা পুলিশের ঘুষ বা চাঁদা বাজি চুক্তিমালা লঙ্ঘিত হয়েছে।
কথা হয় বেনাপোলের ইজিবাইক চালক আতাউর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, প্রতিমাস শেষ হওয়ার পূর্বেই তিনি এশিয়ান হাইওয়ের মহাসড়কে তার ইজিবাইক চলাচলের জন্য নাভারন হাইওয়ে পুলিশের কাছ থেকে ৯ শত টাকার সিলিপ ক্রয় করে থাকেন। প্রতিদিনের মতো এদিনও মহাসড়কে স্বাভাবিকভাবে চলাচলের সময় তার ইজিবাইকটি আটক করেন নাভারন হাইওয়ে পুলিশ। এসময় তিনি পরিশোধ স্লিপ দেখালেও তার বাইকটিতে ৫হাজার টাকার মামলা দেয়া হয়। যা তার মতো গরীব মানুষের পে অমানবিক নির্যাতনের সামিল বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আমাদের অনেকে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ইজিবাইক ক্রয় করে ভাড়া খেটে সংসার পরিজনের খাদ্যর চাহিদা, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ জোগান, চিকিৎসা ও ঔষধ ক্রয়ের মধ্যদিয়ে পুলিশের সাথে চুক্তি মাফিক তাদের চাহিদামত ঘুষ স্লিপ ক্রয় করি। এরপরেও আমাদের বাইকগুলি আটকিয়ে মামলা দেওয়ায় মরার উপর খাড়ার ঘার সামিল।
এবিষয়ে নাভারন হাইওয়ে পুলিশের অফিসার ইনচার্জ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন,অবৈধ যান চলাচলের জন্য কোন মাসিক স্লিপ দেওয়া হয় না। তাছাড়া পুলিশ কোন স্লিপ দেয় না। এটা মিথ্যে কথা। এরপর তিনি বলেন কিছু সাংবাদিক সংবাদ প্রকাশ করেছে তাদের আমি মাসিক টাকা দেই। কেন টাকা দেন টাকার উৎস কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, না আমাদের এখানে আসে তাই তাদের মাসে মাসে কিছু দেই।
জানা যায়, বেনাপোলের তিনশতাধিক, শার্শার দেড় শতাধিক, নাভারনের দুই শতাধিক ও বাগআঁচড়ার দুই শতাধিক ইজিবাইকের প্রত্যেকে নাভারন হাইওয়ে ফাঁড়ি পুলিশের ৯ শত টাকার স্লিপ ক্রয় করে মহাসড়কে চলাচল করে।
এছাড়া, নাভারনের সাতীরা মোড় থেকে দেড় শতাধিক ও নাভারন কলেজের সামনে থেকে বেনাপোল ইউনিয়ন পরিষদের সামনে পর্যন্ত দেড় শতাধিক জেএসএ যান চলাচল করে। তাছাড়া শার্শা উপজেলার বেনাপোলসহ বিভিন্ন প্রান্তের সহস্রাধীক মাটি-বালির ট্রাক ও ট্রাক্টর হাইওয়েতে চলাচল করে। সে সাথে নসিমন করিমন চলাচল করে অহরহ। এসকল খাত থেকে নাভারন হাইওয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ মোটা টাকার বাণিজ্য করেন বলে এলাকায় ব্যাপকভাবে সমালোচিত হচ্ছে।
উল্লেখ্য, সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে জাতীয় মহাসড়কে থ্রি-হুইলার, অটোরিক্সা ও অটো টেম্পো এবং সব শ্রেণীর অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল করতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলেও বিশেষ ক্ষমতার জোরে সরকারের আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে এ পুলিশ কর্মকর্তা শার্শা উপজেলাসহ পাশর্^বতী কয়েকটি উপজেলার নিষিদ্ধ যানবাহনকে মহাসড়কে চলার অনুমতি স্লিপ দিয়ে রমরমা বাণিজ্য করে চলেছেন।
মন্তব্য করে দূরপাল্লার অধিকাংশ পরিবহন চালকরা বলেন, হাইওয়ের প্রত্যেক সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে থ্রি-হুইলার, অটোরিক্সা, অটোটেম্পো, ভাটার মাটির ট্রাক, ট্রাক্টর, নসিমন, করিমনসহ বিভিন্ন শ্রেণীর সরকার নিষিদ্ধ যানবাহন। তারা অবৈধভাবে হাইওয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করে এ সব গাড়ি চালাচ্ছেন। যেকারণে প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনার মুখে পড়তে হয় বড় বড় পরিবহনের।
রাজু আহমেদ
বেনাপোল, যশোর
Post a Comment